Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

ভুট্টা উৎপাদন কৌশল

আমাদের দেশে ভুট্টা বা কর্ন অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি খাবার। ভুট্টার মোচা পুড়িয়ে খাবার প্রচলন চলে আসছে বহুকাল ধরেই। আধুনিক জীবনেও ভুট্টা তার নিজ গুণে ঠাঁই করে নিয়েছে নানা রূপে নানা স্বাদে। ভুট্টার খই বা পপকর্ন কখনও খায়নি অথবা খেয়ে পছন্দ করেনি এমন মানুষ আজকাল আর খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ক্লান্তিকর দীর্ঘ পথচলা কিংবা ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার একঘেয়ে সময়গুলোকে কিছুটা বৈচিত্র্যময় করতে পপকর্ন ভালো সঙ্গী। বাচ্চাদের কাছে তো এটা  সবসময়ই প্রিয়। আর সকালের নাশতায় কর্নফ্লেক্স সব ঋতুতে সব জায়গায় সব বয়সীদের জন্য  উপযোগী। এছাড়াও ভুট্টা থেকে তৈরি হতে পারে নানা রকম রুটি, খিচুরি, ফিরনি, নাড়–সহ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিভিন্ন খাবার। মজাদার চাইনিজ খাবার তৈরিতে অপিহার্য কর্নফ্লাওয়ার ভুট্টারই অবদান। ভুট্টা যেমন সুস্বাদু তেমনি স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে যার  জুড়ি নেই। রক্তস্বল্পতা দূর করতে প্রয়োজনীয় আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ভালো উৎস ভুট্টা। ভুট্টার  ভিটামিন এ সি ও লাইকোপিন ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধী ফাইবার এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে, রয়েছে কার্বোহাইড্রেট যা শরীরে শক্তি জোগায়। ভুট্টা ডায়াবেটিস ও রক্তের  উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, আমাদের হৃৎপি- ও কিডনির সুরক্ষা করে।  চমৎকার স্বাদ আর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ খাবারটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর ধরেই জন্মানো সম্ভব। এর ফলনও হয় অনেক বেশি। মানুষের খাবার শুধু নয় ভুট্টা গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি কিংবা মাছের খাবার হিসেবেও উৎকৃষ্ট বলে  এরই মধ্যে প্রমাণিত। হাঁস-মুরগি, মাছ ও গবাদিপশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভুট্টার ভাঙা দানা ও গাছ  অতুলনীয়। জ্বালানি হিসেবেও ভুট্টা গাছ ব্যবহার করা যায়। ভুট্টার চাহিদা তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে- বাড়ছে জমিতে ভুট্টা উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশের কৃষি জমিতে  খাদ্য শস্য হিসেবে ধান ও গমের পরের জায়গাটি এখন ভুট্টার দখলে। বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার উৎপাদন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অল্প জমি থেকে অধিক ফলন এখন সময়ের দাবি। এ দাবি পূরণে সময় এসেছে ভুট্টা চাষে বাড়তি  নজর দেয়ার।
জাত
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এ পর্যন্ত ভুট্টার বেশ কিছু উন্নত জাত ও হাইব্রিড ভুট্টার জাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হলো শুভ্রা, বর্ণালী, মোহর,  খই ভুট্টা, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি  ভুট্টা-৭, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১,  বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২,  বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩, বারি  টপ ক্রস হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৬, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৭, বারি  হাইব্রিড ভুট্টা-৮, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৯, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১০, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১১, বারি বেবি  কর্ন-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৩।

ফসলের নাম

উৎপাদনের পরিমাণ(লাখ মেট্রিক টন)

২০১০-১১

অথবছর

২০১১-১২

অথবছর

২০১২-১৩

অথবছর

২০১৩-১৪

অথবছর

২০১৪-১৫

অথবছর

২০১৫-১৬

অথবছর

ধান(চাল)

৩৩৫.৪১

৩৩৮.৯

৩৩৮.৩৩

৩৪৩.৫৬

৩৪৭.১০

৩৪৯.৯৬

গম

৯.৭২

৯.৯৫

১২.৫৫

১৩.০২

১৩.৪৮

১৩.৪৮

ভুট্টা

১৫.৫২

১৯.৫৪

২১.৭৮

২৫.১৬

২৩.৬১

২৭.৫৯

পছন্দমতো জাত বেছে নিয়ে তা ভুট্টা চাষের উপযোগী জমিতে লাগাতে হবে। বেলে দো-অাঁশ ও দো-অাঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য ভালো। জমি এমন হতে হবে যেন পানি জমে না থাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে  ভুট্টা বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হলো রবি মৌসুমে মধ্য-আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ (অক্টোবর-নভেম্বর) এবং খরিফ মৌসুমে ফাল্গুন থেকে মধ্য-চৈত্র (মধ্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ) পর্যন্ত।   
বীজ বপনের হার ও দূরত্ব
শুভ্রা, বর্ণালী ও মোহর জাতের ভুট্টার জন্য হেক্টরপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ কেজি এবং খইভুট্টা জাতের জন্য  ১৫ থেকে ২০ কেজি হারে বীজ প্রয়োজন হবে। ভুট্টার  বীজ সারিতে বুনতে হয়। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির  দূরত্ব ৭৫ সেন্টিমিটার এবং সারিতে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্বে দুইটি গাছ রাখতে হবে।
সার ব্যবস্থাপনা
ফসলের ভালো ফলনের জন্য সার ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। ভুট্টার ক¤েপাজিট জাতের জন্য প্রতি হেক্টরে রবি মৌসুমে ১৭২ থেকে ৩১২ কেজি এবং খরিফ মৌসুমে ২১৬ থেকে ২৬৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োজন হয়। হাইব্রিড জাতের জন্য রবি মৌসুমে এ চাহিদা ৫০০ থেকে ৫৫০ কেজি। ক¤েপাজিট জাতের জন্য প্রতি হেক্টরে  টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বোরিক এসিড  ও গোবর সার প্রয়োজন রবি মৌসুমে যথাক্রমে ১৬৮ থেকে ২১৬ কেজি, ৯৬ থেকে ১৪৪ কেজি, ১৪৪ থেকে ১৬৮ কেজি, ১০ থেকে ১৫ কেজি, ৫ থেকে ৭ কেজি ও ৪ থেকে ৬ টন এবং খরিফ মৌসুমে যথাক্রমে ১৩২ থেকে ২১৬ কেজি, ৭২ থেকে ১২০ কেজি, ৯৬ থেকে ১৪৪ কেজি, ৭ থেকে ১২ কেজি, ৫ থেকে ৭ কেজি ও ৪ থেকে ৬ টন। হাইব্রিড জাতের জন্য রবি মৌসুমে প্রয়োজন ২৪০ থেকে ২৬০ কেজি টিএসপি, ১৮০ থেকে ২২০ কেজি এমওপি, ২৪০ থেকে ২৬০ কেজি জিপসাম, ১০ থেকে ১৫ কেজি জিংক সালফেট, ৫ থেকে ৭ কেজি বোরিক এসিড এবং ৪ থেকে ৬ টন গোবর সার। জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মোট ইউরিয়ার এক তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। বাকি  ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫ থেকে ৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০ থেকে ৫০ দিন পর উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
 সেচ
রবি মৌসুমে সেচ প্রয়োগ করলে ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে। বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিনের  মধ্যে প্রথম সেচ, ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় সেচ, ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তৃতীয় সেচ এবং ৮৫ থেকে ৮৯ দিনের মধ্যে চতুর্থ সেচ দেয়া যেতে পারে। ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময়  জমিতে পানি জমে থাকা ক্ষতিকর। চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বালাই ব্যবস্থাপনা
ভুট্টায় সাধারণত যেসব রোগবালাইয়ের আক্রমণ দেখা যায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বীজ পচা ও চারা গাছের রোগ। নানা রকম বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের কারণে এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে  ক্ষেতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়। বর্ণালী ও মোহর জাত এ রোগ প্রতিরোধী। জমিতে পরিমিত  রস  ও তাপমাত্রায় (১৩ সেলসিয়াসের বেশি) বজায় রেখে এ রোগের প্রকোপ কমানো যায়। এছাড়াও সুস্থ সবল বীজ ব্যবহার এবং বীজ শোধন করে আক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। বীজ শোধনের জন্য থিরাম বা ভিটাভেক্স (০.২৫%) ২.৫ থেকে ৩.০ গ্রাম/কেজি হারে মিশিয়ে নিতে হবে।
পাতা ঝলসানো রোগ ভুট্টার আরেকটি ছত্রাকজনিত রোগ। আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় প্রথমে লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরে গাছের উপরের অংশে তা বিস্তার লাভ করে। রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা সময়ের আগেই  শুকিয়ে যায়, শেষ পর্যন্ত গাছ মরে যায়। মোহর জাতটি এ রোগ প্রতিরোধী। এ রোগের জীবাণু অনেক দিন বেঁচে থাকে এবং বাতাসের সাহায্যে তা ছড়ায় বলে ফসল সংগ্রহের পর জমি থেকে আক্রান্ত গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে। পুড়িয়ে ফেলতে পারলে ভালো হয়। রোগের আক্রমণ দেখা গেলে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছত্রাকজনিত রোগ মোচা ও দানা পচা রোগ যা ভুট্টার ফলন কমায় সেই সাথে কমায় বীজের গুণাগুণ ও খাদ্যমান। মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়। দানা অপুষ্ট থাকে ও বিকৃত হয়ে যায় এবং সেখানে ছত্রাকের উপস্থিতি অনেক সময় খালি চোখেই দেখা যায়। গাছে মোচা আসা থেকে পাকা পর্যন্ত সময়টায় যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি থাকে তা হলে আক্রমণ বাড়ে। একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ বর্জন করতে হবে কারণ  জীবাণু বীজ অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে। গাছ মাটিতে পড়ে গেলে এ রোগ বেড়ে যায় বলে এদিকে সতর্ক দৃষ্টি  দিতে হবে। পরিপক্ব ভুট্টা দ্রুত সংগ্রহ করে পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। ভুট্টার কা- পচা রোগও বিভিন্ন প্রজাতির ছত্রাক ঘটিয়ে থাকে। এতে কা- পচে গিয়ে গাছ ভেঙে পড়ে। ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে লাগিয়ে এবং নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগের প্রাদুর্ভাব কমানো যায়। এছাড়াও ফসল সংগ্রহের পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত জমিতে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হবে।
পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতেও সতর্ক হওয়া জরুরি। চারা অবস্থায় যদি কাটুই পোকার আক্রমণ দেখা দেয় তা হলে কীড়াগুলো মেরে ফেলতে হবে। ভোর বেলা কাটা গাছের গোড়া খুঁড়ে এদের মারা যায়। আরেকটা উপায় হচ্ছে সেচ দেয়া। তাহলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা কীড়া মাটির ওপর আসে তখন পাখির সাহায্যে বা হাত দিয়ে মেরে এদের দমন করা যায়। কাটুই পোকার জন্য বালাইনাশক হিসেবে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ৫ মিলিলিটার ডারসবান/পাইরস ২০ ইসি মিশিয়ে চারা গাছের গোড়ায় স্প্রের করে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। শক্ত কাণ্ডে মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিলে  মার্শাল ২০ ইসি বা ডায়াজিনন ৬০ ইসি প্রতি লিটার পানির সাথে ২ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে পাতা ও কাণ্ড ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
ভুট্টা পুষ্ট ও পরিপক্ব হলে সংগ্রহ করতে হবে। মোচা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে ভুট্টা সংগ্রহ করা যায়। ভুট্টার গড় ফলন হেক্টরপ্রতি কম্পোজিট জাতে গড়ে ৪ থেকে ৫.৫ মেট্রিক টন, হাইব্রিড জাতে ৮ থেকে ১১ মেট্রিক টন এবং খই ভুট্টার ফলন হেক্টরপ্রতি গড়ে ৩ থেকে ৪ মেট্রিক টন। বীজ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা বেছে নিতে হবে। যত্নে উৎপাদন করা এ ভুট্টাকে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকাতেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে খুব যত্ন করে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন করে সমৃদ্ধি আনতে আমাদের হয়তো আর খুব বেশি দিন  অপেক্ষা করতে হবে না।

কৃষিবিদ উর্মি আহসান*
* উপজেলা কৃষি অফিসার (এলআর), কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon